ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র তাণ্ডব: সারাদেশে ৮ জনের প্রাণহানি

দেশজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারাদেশে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে দেয়াল ধসে চারজন এবং গাছ পড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক শিশুসহ দুইজন, টাঙ্গাইলের বাসাইলে একজন ও শরীয়তপুরে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
একইসঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত এবং অনেক এলাকায় ব্যাপক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। জমির পাকা, আধাপাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলায় বসতঘরের মাটির দেয়াল ধসে এক পরিবারের মা, তিন ছেলে-মেয়েসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার ১ নম্বর ওয়ার্ড মরিচ্যাঘোনায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজারের মরিচ্যাঘোনার পানিরছড়া মৃত ঠান্ডা মিয়ার ছেলে ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, ছেলে শাহিদুল মোস্তফা, মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন ও সাদিয়া বেগম।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আবদুল ওহাব নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওহাব সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মিরসরাইয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মারা গেছে ছিদরাতুল মুনতাহা নামে এক শিশু। মুনতাহা মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড়ের মহানগর এলাকার আনোয়ার হোসেনের মেয়ে।
এদিকে, শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে ঝোড়ো বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাজ্জাক মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। নিহত রাজ্জাক মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামের কুসুম মিয়ার ছেলে। তিনি বাসাইলের কোটিপতি মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।
এছাড়া শরীয়তপুরে জুলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের বালিকুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জুলেখা বেগম একই এলকার মৃত সাত্তার আলী বেপারীর স্ত্রী।
কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির কারণে উঠতি আমন ফসলও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এদিকে, শুক্রবার যেসব স্থানের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে তার মধ্যে বেশকিছু এলাকায় বড় বড় গাছ ভেঙে ও উপড়ে পড়ে ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল।
প্রসঙ্গত, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গত ১৪ নভেম্বর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর সেটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সেই ঘূর্ণিবায়ুর চক্র ১৫ নভেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তারপর বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে বৃহস্পতিবার পরিণত হয় গভীর নিম্নচাপে। পরে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ওই অবস্থায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সাত নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’।