রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে টিসা ফল চাষে সফলতা অর্জন

টিসা ফল, এগ ফ্রুট (Egg fruit) বা ডিম ফল। এর উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকায়। ভিটামিন, মিনারেল ও ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ এই ফলের জাত বাংলাদেশের জন্য একটি মাইনর ফ্রুট বা অপ্রচলিত জাত। ৪ থেকে ৫ বছরের একটি গাছে গড়ে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’টি ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ১৭০ থেকে ১৯৫ গ্রাম হয়ে থাকে। গাছ প্রতি ফলন হয় ৬৫ থেকে ৭০ কেজি। এই ফলের খাবার উপযোগী অংশ প্রায় ৮০ থেকে ৮২ ভাগ। প্রতিটি পরিপক্ব ফলের রং হলদে রঙের হয়।
পার্বত্য এলাকার কৃষির বাতিঘর হিসাবে পরিচিত কাপ্তাইয়ে রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম এই ফলের চাষ শুরু করা হয় বলে জানান, গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
আলাপকালে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৫ সালে এই ফলের চাষ করার পর ২০২১ সালে গাছে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। গবেষণা কেন্দ্রের ২০টি গাছের প্রতিটিতে এখন ফলন হয়েছে। উচ্চ পুষ্টিগুন সম্পন্ন এই ফলটির ভিতরের অংশ দেখতে অনেকটা সিদ্ধ ডিমের কুসুমের মতো। তাই এটাকে এগ ফ্রুট বা ডিম ফল বলা হয়। গত ৬ বছর যাবত এই গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই ফল নিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। পাহাড়ী অঞ্চলের আবহাওয়া, মাটি ও তাপমাত্রা এই ফল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তাই পাহাড়ের কোন রকম ক্ষতি না করে অব্যবহৃত জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে এই ফলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারে। পাশাপাশি আমাদের কৃষি অর্থনীতির এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। এছাড়া এই ফল দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন কেক, চকলেট, জুস এবং আইসক্রিম তৈরী করা হয়।
গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের বলেন, গবেষণা কেন্দ্রে টিসা ফলের উপর ২০২২-২০২৩ অর্থ বছর একটি পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষায় ৪টি জার্মপ্লাজম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছিল। এবং এই ৪টি জার্মপ্লাজমই গবেষণা কেন্দ্রে রোপণ করা হয়। এতে ফলটির স্বাদ এবং গন্ধ ডিমের মতো। তাই এটাকে ডিম ফলও বলে। বংশ বিস্তারের জন্য বীজ থেকে টিসা ফলের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রাপ্টিং বা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করতে আমরা সফল হয়েছি। আশা করি, পাহাড়ে কৃষকদের কাছে এই টিসা ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারবো।
গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সহকারী মোঃ সামছুদ্দোহা বলেন, কম বেশী এই ফলটি সারা বছর ফলন দেয়। বর্ষা মৌসুমের আগে বা পরে সাধারণ সার দিলেই হয় এই গাছগুলোতে। এই গাছে কোন রোগ হয় না এবং সহজে চাষাবাদ করা যায়।