রাঙামাটি । রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০২৩

চন্দ্রঘোনা রেশম গবেষণা কেন্দ্র

পাহাড়ে রেশম চাষ সম্প্রসারণে এগিয়ে যাচ্ছে

পাহাড়ে রেশম চাষ সম্প্রসারণে এগিয়ে যাচ্ছে
কাপ্তাইয়ের আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রে রেশম গুটি বাছাই কাজে ব্যস্ত জনৈক শ্রমিক।

কাপ্তাই উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রটি পাহাড়ে রেশম চাষ সম্প্রসারণে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে দিনদিন পার্বত্য এলাকায় রেশম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময় বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হতো গবেষণা কেন্দ্রটি। তখন অনুদানের অর্থেই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যে কারণে গবেষণা কাজে তেমন গতি ছিল না। পরবর্তিতে রেশম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রকে বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নিকট হস্তান্তর করা হলে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কাজে গতি ফিরে আসে। বর্তমানে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী, রাঙামাটি সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় রেশম চাষ সম্প্রসারণে এগিয়ে যাচ্ছে এই গবেষণা কেন্দ্র। বিশেষ করে রেশম চাষে পাহাড়ের প্রান্তিক চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। শুধু রেশম চাষের উপরই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং রেশম গুটি চাষ থেকে শুরু করে রেশমী সূতা তৈরি পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে এই আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র।

গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ভূ-প্রকৃতি ও অনুকুল আবহাওয়ার কারণে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পাহাড়ি এলাকায় রেশম চাষের উপযোগী। সে সাথে রেশম চাষে অল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই বেকারত্ব দুর করণে এবং পাহাড়ের প্রান্তিক চাষীদের মাঝে রেশম চাষের আগ্রহ বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রাঙামাটি জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় দেড় হাজার অধিবাসী রেশম চাষ করছে। তাছাড়া রেশম চাষ বাড়াতে চাষীদের সর্বোচ্চ সহযোগীতাও করে আসছে কেন্দ্রটি।

এদিকে, চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগীতা নিয়ে রেশম চাষ করে সফলতা পেয়েছে জেলার কাউখালী উপজেলার বেতছড়ির বাসিন্দা রোজিনা বেগম। রেশম চাষের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে রেশম গুটি চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি রেশম চাষ করে লাখ টাকা আয় করছেন।

তিনি জানান, তিন মেয়ে, এক ছেলের সংসার চালাতে একসময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। তবে রেশম গুটি চাষ করায় সংসারের চিত্র পাল্টে গেছে। তিনি বর্তমানে স্বাবলম্বী হয়ে তার সব সন্তানদের লেখাপড়া করে শিক্ষিত করেছেন। এখন ভালই কাটছে তার সংসার।

রোজিনা বেগমের মতো কাপ্তাই উপজেলার রেশম চাষী হাসিনা বেগম, সামাপ্রু মারমাসহ অনেক প্রান্তিক চাষী রেশম গুটি চাষ করে সফলতা পাচ্ছে। বিশেষ করে রেশম গুটি চাষে খরচ বাদ দিয়ে প্রতি ছয় মাস অন্তর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে তারা জানান। এছাড়া তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে রেশম চাষে স্বাবলম্বী করতে চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র ভূমিকা রাখছে বলে তারা জানায়।

তবে অধিকাংশ চাষী জানান, রেশম চাষটি প্রকল্পের আওতাভুক্ত। তাই প্রকল্প শেষ হলে অনেক সময় চাষীদের বিভিন্ন চিন্তায় পড়তে হয়। কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনেকে এই চাষ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ এবং অর্থ সহায়তা বাড়ালে রেশম চাষের পরিধি আরো বাড়বে বলে তারা আশা করেন। 

অন্যদিকে, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া কিংবা রেশম চাষ বাড়াতে যেমন ভূমিকা রাখছে তেমনি রেশম পোকার পরিচর্যা কিংবা গুটি থেকে সূতা তৈরির প্রক্রিয়াটিও এখানে হয়ে থাকে।

এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্রের রিয়ারিং হাউস শাখায় কর্মরত মোঃ সেলিম জানান, এই আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রে রেশম পোকার ৩২টি জাত নিয়ে কাজ করা হয়। যেই জাতগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, প্রথম ধাপে সড়কের পাশে কিংবা খালি জায়গায় তুঁত চাষ করা হয়। রেশম পোকার প্রধান খাদ্য হচ্ছে তুঁত গাছের পাতা। তুঁত গাছের কচি পাতা গুলো সংগ্রহ করে ছোট ছোট টুকরা করে পোকাগুলোকে খাওয়ানো হয়। এরপর পোকাগুলো তিনদিন পাতাগুলো খাবে এবং খোলশ পাল্টে দ্বিতীয় ধাপে যাবে। এভাবে পঞ্চম ধাপে গিয়ে রেশম পোকাগুলো সুতার গুটি দেওয়া শুরু করবে। তবে গুটি দেওয়ার পর পোকাগুলোর জীবনচক্র শেষ হবেনা। আবারো পরবর্তীতে প্রজননের জন্য যাচাই বাছাই করে এবং প্রক্রিয়াজাত করে পোকা গুলোকে পরিচর্যা করা হয়। এভাবে গুটি থেকে রেশমি সূতা তৈরির প্রক্রিয়াটাও এই কেন্দ্রে হয়ে থাকে।

অপরদিকে, রাঙামাটি জেলা রেশম চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডঃ মোহাম্মদ সিরাজুর রহমান জানান, আমাদের দেশে রেশমের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪শ’ মেট্রিক টন। তবে আমরা সরকারি ভাবে মাত্র ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন করছি। বাকিটা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই রেশম চাষের প্রকল্প বাড়ানো গেলে পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেশম চাষ আরও বেগবান হবে। সে সাথে দেশীয়ভাবে রেশম চাষের উৎপাদন বাড়ানো গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদ্যশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত বিষয়: