আগামীকাল পবিত্র আশুরা

আগামীকাল (২০ আগস্ট) শুক্রবার ১০ মহররম পালিত হবে পবিত্র আশুরা। হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পালিত হয় আশুরা। মানব ইতিহাসের নানা তাৎপর্যময় ঘটনার সাক্ষী এই দিনটি। নানান গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনটিকে মর্যাদাপূর্ণ করে তুলছে।
আরবি ‘আশারা’ শব্দ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। আশারা অর্থ দশ, আর আশুরা মানে দশম। ইসলামী পরিভাষায় আরবি বর্ষপঞ্জি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। এছাড়াও এ মাসের ১০ তারিখে ১০টি বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, সে কারণেও মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে।
হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।ই শোক ও স্মৃতিকে স্মরণ করে সারা বিশ্বে মুসলিমরা আশুরাকে ত্যাগ ও শোকের দিন হিসেবে পালন করেন।
আল্লাহ তায়ালা এ দিন পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তার ইচ্ছায় এ দিনেই কিয়ামত ঘটবে। এছাড়াও আরো অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ফজিলত আছে এই দিনের। আমাদের প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিন রোজা রাখতেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনাতে এলেন তখন ইয়াহুদিগণ আশুরার দিন রোজা রাখতেন। তারা জানাল, এ দিন মুসা (আ.) ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী (সা.) তার সাহাবীদের বললেন, মুসা (আ.) এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার দিক থেকে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা (আশুরার দিন) রোজা রাখ।’ (বুখারি)
আশুরার দিন রোজা রাখলে এক বছরের সগিরাহ গোনাহ মাফের আশা করেছেন স্বয়ং মহানবী। অন্য হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি : ১/১৫৮)
মহান আল্লাহ আদিপিতা আদম (আ.)-কে এই দিন জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠান। আবার এই দিন আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন। এছাড়াও এ দিনেই সমগ্র মানবজাতির মা ও আদম (আ.)-এর স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে পৃথিবীতে প্রথম সাক্ষাৎ হয়।
আল্লাহর প্রিয়নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি অগ্নিকুণ্ডে ৪০ দিন থাকার পর মহররমের ১০ তারিখ মুক্তি লাভ করেন।
বনি ইসরাইলের নবী হজরত মুসা (আ.)। তিনি ফেরাউনের জুলুম থেকে বাঁচতে সঙ্গী-সাথীসহসহ অন্যত্র চলে যান। নীল নদ পার হয়ে নিরাপদে পৌঁছে যান। আর ফেরাউন তার দলবলসহ নদীরে পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া প্রলয়ংকরী তুফান থেকে হজরত নূহ (আ.) এর কিশতির নাজাত লাভসহ হজরত আইয়ুব, হজরত দাউদ, হজরত সুলায়মান ও হজরত ঈসা প্রমুখ আম্বিয়া (আ.) আল্লাহপাকের বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন। এছাড়া এ দিবসে কিয়ামত হবে বলেও বর্ণনায় পাওয়া যায়।
এছাড়াও আরো অনেক অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা দ্বারা আশুরার দিনটি মহান আল্লাহ তায়ালা মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কোরআনের সব আয়াত এবং হাদিস বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আলোকিত রাঙামাটি