রাঙামাটি । বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪ , ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ১৭ মে ২০২৪

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে টানা ৫০ বছর ধরে রোজা রাখা সেই দিনমজুরের

স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে টানা ৫০ বছর ধরে রোজা রাখা সেই দিনমজুরের

নাম ইনসান আলী। বয়স ৭০ এর কোটায়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি ছিল তার প্রবল অনুরাগ। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে মাওলানা হবেন। সংসারে অভাব অনটনের কারণে তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি। তবে আল্লাহর পথে অবিচল ছিলেন তিনি। সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ এবং সারা বছর রোজা রাখতেন। টানা ৫০ বছর ধরে রোজা রাখা ইনসান আলী স্বপ্ন পূরণে এবার হজে যাচ্ছেন।

ইনসান আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের মৃত নছর উদ্দিন মুন্সির ছেলে।

জানা গেছে, পাঁচ বছর বয়স থেকে ইনসান আলী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রোজা রাখা শুরু করেন। সাত বছর বয়সে ছেলেকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য বাবা নছর উদ্দিন তাবলীগ জামাতে পাঁচ বছরের চিল্লাতে পাঠিয়ে দেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে একজন পরিপূর্ণ মুসল্লি হিসেবে বাড়ি ফেরেন তিনি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি পাঁচদিন বাদে সারা বছর একটানা রোজা রাখা শুরু করেন। এভাবেই কেটে গেছে ৫০ বছর।

গত ৫০ বছরে ইবাদতে হতদরিদ্র ইনসান আলী আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন যেন তাকে একবার হজ করার তৌফিক দেন। তার সেই ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। তিনি এ বছর ইনসান আলীর হজ পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগামী মাসের ১০ জুন হজ পালনের উদ্দেশ্যে তিনি সৌদি আরব রওনা দেবেন।

টানা ৫০ বছর রোজা ও হজে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনসান আলী জানান, হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবার রেখে যাওয়া ১৪ শতাংশের বসতভিটা ও সামান্য কিছু ফসলি জমি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। তার ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ে। ছেলেরা দিনমজুর। সবাই বিবাহিত। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করেন। ছেলেদের আয়ে তাদের সংসার চলে। তিনিও তাদের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা করেন। শত অভাব অনটনে কখনই রোজা ছেড়ে দেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, রোজা রাখতে গিয়ে প্রথমে তার কষ্ট হতো। বাড়ির লোকজন কিছুটা অসুবিধা বোধ করতো। পরে অবশ্য আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে গেছে। তবে অভাব দূর হয়নি তার।

ইনসান আলী বলেন, ‘অনেক দিন শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচুগাছ, লতা সেদ্ধ করে খেয়ে রোজা রেখেছি। যত কষ্টই হোক রোজা ছাড়িনি। ইফতারে চকলেট, বাজার করে নিয়ে আসা চাল, কখনো শুধু পানি  আবার কখনো গাছের পাতা চিবিয়ে ইফতার করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইফতারের পরে নামাজে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম আল্লাহ যেন আমাকে হজ করার তৌফিক দেন। আমার নিজের তো হজের খরচ জোগানোর ক্ষমতা নেই। ছেলেরা যে আমাকে হজে পাঠাবে তাদেরও সামর্থ্য নেই। তাদেরই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। তবুও হতাশ না হয়ে বারবার ফরিয়াদ করেছি। আল্লাহ আমার ইচ্ছাকে কবুল করেছেন। তার অসীম কুদরতে আমার হজে যাওয়ার উছিলা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে পাঠিয়েছেন। ঐ স্যারের সহযোগিতায় আগামী ১০ জুন পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেব ইনশাআল্লাহ। যে মানুষটি আমার হজের যাবতীয় খরচ বহন করে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহ যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

ইনসান আলীর প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম (৬৭) বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ইনসান আলী ভাই প্রতিদিনই রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। দেখা হলেই হজে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন। 

সারোডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলশিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে ইনসান আলী তার সাধনা থেকে বিচ্যুত হননি। টানা ৫০ বছর ধরে রোজা রেখে আসছেন। তার হজে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।

জনপ্রিয়