রাঙামাটি । রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ৭ মে ২০২৪

আপডেট: ০০:৪৮, ৮ মে ২০২৪

নির্বাচনে জিততে রাঙামাটির বরকলে বিধান চাকমার কৌশল!

নির্বাচনে জিততে রাঙামাটির বরকলে বিধান চাকমার কৌশল!

আগামীকাল ৮ই মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের সাধারণ নির্বাচনে রাঙামাটির চারটি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল জেএসএস (সন্তু)। নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে বরকল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেএসএস’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে তাদের দলীয় প্রার্থী বিধান চাকমার দোয়াত কলম প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় মুরুব্বী, কার্বারী (গ্রাম প্রধান), হেডম্যান (মৌজা প্রধান) ও জনপ্রতিনিধিদের হুমকি ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতা সন্তোষ কুমার চাকমাকে আনারস প্রতীকে ভোট দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে ভোটারদের।

এ বিষয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেএসএস’র সন্ত্রাসীদের এমন অপতৎপরতা ও প্রাণনাশের হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরকল উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী প্রার্থী সন্তোষ কুমার চাকমা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডার জয়ধন চাকমার নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একদল সশস্ত্র গ্রুপ বরকল উপজেলার ২নং বরকল ইউনিয়নের বিলছড়া, বেঘেনাছড়ি, হালাম্বা, কুরকুটিছড়ি, ১নং সুবলং ইউনিয়নের বেতছড়ি, চেগেয়াছড়ি ও হাজাছড়া এলাকায় অস্ত্রের মহড়ায় দেখিয়ে ভোটারদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বিধান চাকমাকে ভোট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশ মানা না হলে কঠোর ব্যবস্থা বা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

গত ২৯ এপ্রিল তারিখে ১নং সুবলং ইউনিয়নের বরুনাছড়ি মৌজার শিলছড়ি, হাজাছড়া, তন্যাছড়ি, বটতলী, উকছড়ি, রূপবান, দীঘলছড়ি, পেত্যাছড়ি, ও ধামাইছড়া মৌজার শুকরছড়ি, পানছড়ি, হাজাছড়া এলাকার মুরুব্বীদের ডেকে নিয়ে বিধান চাকমাকে ভোট দেয়ার জন্য বলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বিধান চাকমার প্রতিদ্বন্দী সন্তোষ কুমার চাকমাকে ভোট দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কুকিছড়া, শ্রীনগর, ডেবাছড়ি, নোয়াপাড়া, ডুলুছড়ি, ঠেগা, খুব্বাং, কালাপুনাছড়া, করল্যাছড়ি, ধনুবাগ, আন্দারমানিক, আইমাছড়া, সাইচাল, বগাছড়ি, অজ্যাংছড়ি নিজেদের নিয়ন্ত্রিত সবকটি এলাকায় জনসহতি সমিতির সশ্রস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। আমার কর্মী সমর্থক ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদান করছে। বেশকিছু এলাকায় ইতোমধ্যে ভোটারদের জিম্মি করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার ভোটার, মুরুব্বী, জনপ্রতিনিধিরা অনেক ভয়-ভীতি, উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে জনসংহতি সমিতির প্রার্থী বিধান চাকমা ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী তৎপরতার পাশাপাশি নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়ে তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, গত ২৪ এপ্রিল ২০২৪ রাঙামাটি শহরের একটি রেস্তোরায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনী কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত ১৮ জন শিক্ষককে ডেকে নিয়ে বিধান চাকমাসহ তাদের দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট আদায়ের নির্দেশনা দেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রাথী) সুচরিতা চাকমা ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জ্ঞান জ্যোতি চাকমা।

এ বিষয়ে আমাদের নির্বাচনী এজেন্ট আবুল কালাম রাঙামাটির সিনিয়র নির্বাচন অফিসার বরাবরে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন উক্ত শিক্ষকদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিলেও অভিযুক্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আচরণ বিধি লংঘনের পরেও বিধান চাকমাসহ জনসংহতি সমিতির মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এমতাবস্থায় আমাদের কর্মী সমর্থক ও ভোটাররা বেশ ভয়-ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া, প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা অপতৎপরতার মধ্যেও ভোটাররা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আগামীকাল ০৮ মে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটারদের মুল্যবান ভোট প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে জেএসএস (সন্তু)’র সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলমান থাকলে আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে না। আর আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল জেএসএস (সন্তু)’র প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করলে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণসহ নাশকতা বৃদ্ধি পাবে আর তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে পাহাড় আরো অশান্ত হয়ে উঠবে।

উল্লেখ্য, বরকল উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জেএসএস সন্তু দল তিনটি পদে তাদের প্রার্থী চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে যে কোন মূল্যে নিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, কারণ বরকল উপজেলা হচ্ছে জেএসএস (সন্তু)’র রসদ সরবরাহের অন্যতম প্রধান চ্যানেল। এই বরকল উপজেলার ছোট হরিণা, ঠেগা মুখ দিয়ে তারা সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে অবাধে চলাফেরা করতে পারে। তাদের অস্ত্র সরবরাহ করার অন্যতম রুট এটি, এছাড়াও তাদের সন্ত্রাসী দল চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশী অংকের চাঁদা আসে এই বরকল উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়েই। রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে তারা এই বরকল উপজেলাকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে সিমান্তের ওপারে চলে যায়। তাই বরকল উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে তাদের দলীয় লোক বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জেএসএস সন্তু।