রাঙামাটি । রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৭ মে ২০২৪

আপডেট: ০০:৫৪, ৮ মে ২০২৪

নির্বাচনে জিততে রাঙামাটিতে জেএসএস’র অপতৎপরতা!

নির্বাচনে জিততে রাঙামাটিতে জেএসএস’র অপতৎপরতা!

কাল ৮ মে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের সাধারণ নির্বাচনে রাঙামাটির চারটি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সশস্ত্র অতৎপরতা বাড়িয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল জেএসএস। নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে  বেপরোয়া হয়ে উঠেছ। আধিপত্য বিস্তার, সাধারণ জনগণের মাঝে আতংক সৃষ্টি করতে জেএসএস (সন্তু)’র সশস্র সন্ত্রাসরী শুরু করেছে একের পর এক গুম, খুন, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় রাজনৈতিক মূলধারার দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উপজাতি নেতৃবৃন্দকে টার্গেট করে ২ জন জনপ্রতিনিধিকে অপহরণসহ সশস্ত্র তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে জেএসএস (সন্ত্র)’র দল।

ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ই এপ্রিল সকালে বাঙ্গালহালিয়া বাজারে এসে এক সাথেই স্থানীয় দু’জন জনপ্রতিনিধি নিখোঁজ হয়। এদের একজন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার ক্যাচিংহ্লা মারমা (৩৪) ও অপরজন ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সভাপতি ইখ্যাইমং মারমা (৩৬)। এ বিষয়ে ক্যাচিংহ্লা মারমা’র স্ত্রী বাঙ্গালহালিয়াস্থ চন্দ্রঘোনা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইখ্যাইমং মারমাকে যুবলীগ থেকে জেএসএস এর পক্ষ থেকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যুবলীগ থেকে পদত্যাগ না করায় ও ক্যাচিংহ্লা মারমা শুধুমাত্র তার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় অপহৃত দু’জনকেই উপজাতীয়দের আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস (সন্তু) দলের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছিল। 

এর আগে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪'শ উপজাতি সম্প্রদায়ের লোক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। জেএসএস (সন্তু) এর সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে তারা আর আওয়ামী লীগে সক্রিয় থাকতে পারেননি। ২০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে বিলাইছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বপন কুমার চাকমা, যুবলীগ নেতা রিগান চাকমা, ইউপি সদস্য অমৃত কান্তি তঞ্চংগ্যা, কেংড়াছড়ি মৌজার হেডম্যান সমতোষ চাকমাকে মারধরের ঘটনা ঘটে।

৫ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাম চরণ মারমা ওরফে রাসেল মারমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায় জেএসএস সন্তু গ্রুপের ১০-১২ জনের একটি দল। ওই দিনই রাত ৮টার দিকে জুরাছড়ি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ-সভাপতি অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে মধ্য রাতে ঘরে ঢুকে মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা ও তার পরিবারের আরও দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়।

এভাবে ২০১৭ সালের শেষের দিকে জেএসএস সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে আওয়ামী লীগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়ির নতুন পুরাতন শত শত নেতাকর্মী।

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় উপজাতি এক পক্ষের ভোট বর্জনের মধ্যে ভোটগ্রহণের পর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের উপর জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সাতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে। ওই সময় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়,  বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী কাজ শেষ করে স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে নৌকায় করে বিলাইছড়ি সদরে আসছিলেন সুরেশ। পথে তিনকোনিয়া ইউনিয়নের আলিখেয়াং এলাকায় জেএসএস সন্তুর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নৌকা থামিয়ে স্ত্রী ও ছেলেকে লাথি মেরে নৌকা থেকে ফেলে দেয় এবং সুরেশকে পাশের একটি টিলায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

২০১৯ সালের ১৯ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে জেএসএস’র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। ঐদিন সকাল ৯ টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের আলিখ্যিয়ং এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এবারও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে জেএসএস (সন্তু)র সন্ত্রাসীরা অপহরণ, চাঁদাবাজি, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে প্রাণনাশের হুমকিসহ সশস্ত্র অতৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও প্রকাশ্যে দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এমতাবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

এদিকে, জেএসএস’র সন্ত্রাসীদের এমন অপতৎপরতা ও প্রার্থী-ভোটারদের প্রাণনাশের হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ০৭ মে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরকল উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সন্তোষ কুমার চাকমা। এছাড়া সন্তোষ কুমার চাকমার নির্বাচনী ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদশর্নের ঘটনায় বরকল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। 

উল্লেখ্য, বরকল উপজেলা জেএসএস'র জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের রসদ সরবরাহের অন্যতম প্রধান চ্যানেল ছোট হরিণা, ঠেগা মুখ। সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রেও বরকল এলাকা দিয়ে সহজে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। এবারের নির্বাচনে জেএসএস চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ পদ তিনটিতে নিজেদের প্রার্থীর জয় চাচ্ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে জেএসএস (সন্তু)’র সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলমান থাকলে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে না। আর আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল জেএসএস (সন্তু)’র প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করলে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণসহ নাশকতা বৃদ্ধি পাবে আর তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে পাহাড় আরো অশান্ত হয়ে উঠবে।