রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

আপডেট: ১৩:৪৬, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

​​​​​​​কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট

​​​​​​​কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ, উৎপাদন কমে ৩০ মেগাওয়াট
​​​​​​​পানি কমে যাওয়ায় অলস নৌযান।

তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মনষ্যসৃষ্ট দীর্ঘতম কাপ্তাই লেকে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাপ্তাই লেকের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে লেকের উপর নির্ভরশীল মানুষের ভোগান্তি দিনদিন বাড়ছে। সহসা ভারী বর্ষণ না হলে কিংবা  তাপদাহ অব্যাহত থাকলে কাপ্তাই লেকের পানি আরো কমে যাবে। ফলে দেখা দিবে নানা সমস্যা। এছাড়া কাপ্তাই লেকের পানি কমে যাওয়ায় একদিকে জনভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে লেকের উপর নির্ভর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট পানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ১টি মাত্র ইউনিটে দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে উপজেলার ব্যস্ততম কাপ্তাই জেটিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাপ্তাই লেকের উপর নির্ভরশীল বোট চালকদের দুর্দিন চলছে। অধিকাংশ বোট চালক অলস সময় পার করছে। কাপ্তাই লেকে পানি কমে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা থমকে গেছে। দুর-দুরান্ত থেকে খুব প্রয়োজন ব্যতীত মানুষজন আসা যাওয়া করছেনা। লেকে পানি কমে যাওয়ায় বোটের তেল খরচও বেড়ে গেছে।

স্থানীয় বোট চালক মোঃ আলী, সুবল দাশসহ কয়েকজন জানান, পানি কমে গেলে আমাদের দুঃখ বেড়ে যায়। বিশেষ করে কাপ্তাই লেকে বেশ কিছু স্থানে চর জেগে ওঠায় বোট আটকে যায়। এতে পানিতে নেমে অনেক সময় বোট ঠেলতে হয়। সে সাথে আগের চেয়ে বোটের তেল খরচ বেড়েছে। ফলে আমাদের আয় রোজগারও কমে গেছে। সহসা ভারী বৃষ্টিপাতসহ লেকে পানি না বাড়লে দিনদিন জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। তখন এই পেশা ছেড়ে আমাদের বিকল্প চিন্তা করতে হবে।

এদিকে, সপ্তাহের প্রতি শনিবার কাপ্তাই জেটিঘাটে বসে সাপ্তাহিক বাজার। যেখানে কাপ্তাই লেকের মাধ্যমে বোট নিয়ে বিলাইছড়ি, ফারুয়া, হরিনছড়াসহ দুর্গম এলাকায় উৎপাদিত বিভিন্ন ফলমুল, শাকসবজি নিয়ে আসে স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হওয়ার ফলে অনেকেই ওইসব দুর্গম এলাকা থেকে বাজারে আসতে পারছেনা। ফলে দূর্গম এলাকায় উৎপাদিত সবজি, ফলমুল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ার সাথে দুর্ভোগ বেড়ে যাওয়াতে আগ্রহ হারাচ্ছে স্থানীয় এবং পাইকার বিক্রেতারা। ফলে চাহিদার তুলনায় জিনিসপত্র না আসায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

এ বিষয়ে বিলাইছড়ির ফারুয়া এলাকার বাসিন্দা কলা ব্যবসায়ী কালাচাঁন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আগে প্রতিসপ্তাহে বাজারে বোট যোগে কলা নিয়ে আসতাম।  এখন মাসে একবার আসি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। কলা বিক্রয় করে লাভবান হতে পারছিনা। এছাড়া লেকের পানি কমে যাওয়ায় নৌযানগুলি বিভিন্ন স্থানে আটকে যায়। তাই বোট চালকরাও দুর্গম এলাকায় যেতে চায় না।

কাপ্তাই জেটিঘাটের ব্যবসায়ী মোঃ ইসমাইল জানান, কাপ্তাই লেকের পানি সংকটের প্রভাব জেটিঘাট বাজারেও পড়েছে। এখন বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা কম হচ্ছে। কারণ হচ্ছে কাপ্তাই লেকের পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় দুর-দুরান্ত থেকে বিক্রেতারা আসতে পারছেনা। এতে বাজারে মারাত্বক প্রভাব পড়েছে।

অপরদিকে, কাপ্তাই জেটিঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা শীতল সরকার জানান, বছরের এ সময় কাপ্তাই লেকে পানি কমে ঠিকই। কিন্তু এবছর প্রচন্ড তাপদাহে পানির পরিমাণ অনেক বেশি কমে গেছে। যা আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বর্তমানে তীব্র তাপদাহে পর্যটকও কম আসছে, তেমনি দৈনন্দিন বোটের মাধ্যমে যাত্রী পারাপার কমে গেছে। তাই দ্রুত সময়ে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে এই দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশংকা করছেন তিনি। তিনি জানান, কাপ্তাই লেকে পানির পরিমাণ যদি এভাবে কমে যায়, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে লেকের আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় লেকে পানি থাকার কথা ৮৩.৬০ ফিট মিন সী লেভেল(এমএসএল)। কিন্তু লেকে পানি আছে ৭৫.৭৮ ফিট এমএসএল। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮ ফুট কম। ৬৮ ফিট এমএসএলে পানি নেমে গেলে তাকে বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হয়। তখন কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, কেন্দ্রের ৫ ইউনিট সচল থাকলেও পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। সহসা ভারী বর্ষণ হলে লেকে পানি বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, কাপ্তাই লেক সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভর। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়