রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

দিনে ভয় হিটস্ট্রোকের, চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা

দিনে ভয় হিটস্ট্রোকের, চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা

সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। আর এই দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের ধানচাষিরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে পাকা ধান কাটতে পারছেন না চাষিরা। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলাকে বেছে নিয়েছেন অনেক চাষি। দিনে তীব্র তাপদাহর কারণে বাসায় থাকছেন, আর রাতে চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর কাশাভোগ এলাকায়।

এদিকে, এই সমস্যা সমাধানে সরকারের দেওয়া কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

ধানচাষিরা জানান, অধিকাংশ জমিতে গত একসপ্তাহ ধরে জেলার বোরো ধান পাকা শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার ভয়ে ধান কাটতে পারছেন না চাষিরা। তাই রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ধান কাটতে দেখা গেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর কাশাভোগ এলাকার ধানচাষিদের। এই অতিরিক্ত গরমে শ্রমিক না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের জমির ধান কাটছেন। যতদিন চাঁদের আলো থাকবে, ততদিন এই ধান কাটবেন বলছেন তারা।

সরেজমিনে বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে দুলছে সোনালি ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গেছে। দিনের বেলা প্রখর রোদের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা।

জেলা কৃষিবিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। আর গত বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন বেড়েছে এক হাজার ৭২১ মেট্রিক টন। তবে চলতি বছরে একটানা চলা তীব্র দাবদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে ধারণা কৃষিবিভাগের।

চাষি মিজান শিকদার বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে আমি বোরো ধানের চাষ করেছি। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি এ চাষি। তবে বিপাকে পড়েছেন ধান পাকার পর। তীব্র দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটতে রাজি হচ্ছে না শ্রমিকরা। পরে সিদ্ধান্ত নেই নিজেরাই রাতে চাঁদের আলোয় ধান কাটব। তাই আমরা চারজন চাষি ধান কাটা শুরু করি। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫টা পর্যন্ত আমরা ধান কাটি।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরমের কারণে জেলায় এই প্রথম রাতে চাঁদের আলোয় চাষিদের ধান কাটতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আশা  উচিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে কৃষকদের দিনের বেলা ধান কাটা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, তীব্র তাপদাহর কারণে কিছু কিছু কৃষক রাতে চাঁদের আলোয় ধান কাটছে। সেক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো কম্বাইন হার্ভেস্টার দেওয়া হয়েছে। এই কম্বাইন হার্ভেস্টার যদি ব্যবহার করে তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে তারা ধান কাটতে পারবেন। ধান কর্তনের যে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি থেকেও বাঁচবেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকি মুক্ত থাকবেন কৃষকরা।

জনপ্রিয়