রাঙামাটি । মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধিঃ-

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৬ অক্টোবর ২০২৩

পাহাড়ে বইছে জুমের পাকা ধানের সুবাস, পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের আমেজ

পাহাড়ে বইছে জুমের পাকা ধানের সুবাস, পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের আমেজ
সবুজ পাহাড় জুড়ে জুমের ফসল।

পাহাড়ে জুম চাষ করে জুমের পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পাড়ায় পাড়ায় বইছে উৎসবের আমেজ। জুমের ফসল পেকে গেছে। ঘরে তোলা হবে পাকা ধান। এবার ভাল ফলন হওয়ায় চাষী পরিবারগুলোর মুখে ফুটেছে সোনালী হাসি। আর কয়দিন পরই জুমের ফসল ঘরে তোলা হবে। এনিয়ে পাহাড়ি এলাকার জুমিয়া পরিবারগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে।

জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণ প্রাচীনকাল থেকেই ঐতিহ্যগত ভাবে "জুমচাষ" করে আসছে। এই চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে জীবনধারণ করছে। সাধারণত প্রতিবছরই জুমিয়া জনগণ জুম চাষ করে থাকে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জীবনের তাগিদে জুমচাষিরা পাহাড়ে ধান, ভূট্টা, কাকন, হলুদ, মারফা, কলাসহ বিচিত্র রকমের ফসল চাষ করেছে। এরমধ্যে কিছু ফসল সারাবছর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে জুমের ধান ঘরে তোলার মৌসুম এসেছে। ফলে পাহাড়ে পাহাড়ে এখন জুমের পাকা ধানে ভরপুর। পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠেছে জুমিয়াদের বুক। ফলন ভাল হওয়ায় জুম চাষীদের মুখে সোনালী হাসি ফুটে উঠেছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই ধান কাটা উৎসব শুরু হবে বলে জুম চাষীরা জানায়।

রাঙামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় জুম চাষ হয়ে থাকে। উপজেলার ওয়াগ্গা ও চিৎমরম ইউনিয়নের রামপাহাড় এবং সীতাপাহাড়ের কিছু অংশে দেখা গেছে, এসব পাহাড়ে জুমে চাষ করা ফসলের সমারোহ। যেখানে সবুজ পাহাড় জুড়ে পাকা ধানের সোনালী রঙে ছেঁয়ে গেছে। এই পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশ।

জুম চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জুমচাষী সুমেচিং মারমা জানায়, তিনি দীর্ঘবছর ধরে পাহাড়ে জুম চাষ করছেন। এই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল তার পুরো পরিবার। সারাবছর কষ্ট করে জুম চাষ করার পর এখন ঘরে ফসল তোলার সময়।

তিনি বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার একটু বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু আগে মাটির উর্বরতার কারণে তখন সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হতো না, এখন জুমে সার দিতে হয়। দিনদিন পাহাড়ে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

অপর জুমচাষী মাবুচিং মারমা জানান, একসময় একটি পাহাড়ে অনেক বছর পরপর জুম চাষ করা হতো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জুম পাহাড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এখন একই পাহাড়ে প্রতি বছর জুম চাষ করা হচ্ছে। এতে পাহাড়ে উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং জুম চাষে সারের প্রয়োগ বাড়াছে। এতে ফসলের পুষ্টিক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তবে অনান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়ে থাকে। যেখানে ধানের পাশাপাশি আদা, হলুদ, মারফা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের চাষ করা হয়।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইমরান আহমেদ জানান, কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জুম চাষীদের ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশ্র ফল, ফসল চাষে উদ্ধুদ্ধ করা হয়। তবে জুম চাষীরা স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করলেও কৃষিবিভাগ থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান-৮৭ জাতের ধানের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

তিনি জানান, কাপ্তাইয়ের বেশকিছু এলাকার পাহাড়ে ভালো জুমচাষ হয়। এরমধ্যে কাপ্তাই ইউনিয়নের ব্যাঙছড়ি ও চিৎমরম ইউনিয়নের সীতাপাহাড় এলাকার পাহাড়গুলো উল্লেখযোগ্য।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়