রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ , ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’

কেএনএফ প্রধান নাথান বমের স্ত্রী ‘নিখোঁজ’
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বমের স্ত্রী লাল সমকিমের খোঁজ মিলছে না। বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ তার মোবাইল নম্বর। তবে লাল সমকিম সরকারি হাসপাতালের সেবিকা (নার্স) হওয়ায় তার নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। গেল ৮ এপ্রিল রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছিল। তবে বদলির ১৪ দিন পার হলেও হদিস নেই নাথানের স্ত্রীর। রুমায় তার বাড়িতে নেই লাল সমকিম। এমনকি লালমনিরহাটেও যোগ দেননি তিনি। 

এদিকে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম কোথায় আছেন? ভারতের মিজোরাম, নাকি ইউরোপের কোনো দেশে–তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাটে বদলির আদেশের পর থেকেই লাপাত্তা সমকিম। রুমা সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাসাতেও তিনি থাকছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি আত্মগোপনে গেছেন কিনা– এমন আলোচনাও রয়েছে। 

বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, সমকিমকে না পেয়ে তার তাৎক্ষণিক বদলির অনুলিপি বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। সাধারণত এ ধরনের আদেশের পর জিনিসপত্র গুছিয়ে নতুন বদলির জায়গায় যোগ দিতে ছয় দিন সময় পান। যেদিন সমকিমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে, সেদিন থেকে রুমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার থাকার সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। 

লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী বলেন, নাথানের স্ত্রীর বদলির তথ্য আমরা জেনেছি। তবে তিনি এখনো যোগ দেননি। কেন এত দিনেও নতুন কর্মস্থলে আসছেন না, সেটিও মৌখিক বা লিখিতভাবে জানাননি।

র‍্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কেএনএফের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তবে নাথান বমের স্ত্রী কোথায় আছেন, সেটি জানা নেই।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, নাথানের স্ত্রীর হদিস পাচ্ছি না। তিনি বাড়িতে নেই, এটা জেনেছি। নাথানের অবস্থান নিয়েও স্পষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।

পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয় ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, নাথান বমের ব্যাপারে যে সংস্থা তদন্ত করছে, তাদের কাছ থেকে আবেদন এলেই সেটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলে পাঠানো হবে। আমরা এখনো সে ধরনের চিঠি পাইনি। 

জানা যায়, রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেনপাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেওর ছেলে নাথান বম। তার বাবা ছিলেন জুমচাষি। মা মৃত রৌকিল বম। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাথান ছোট। অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন নাথান। তার দুই ভাই জুম চাষ করেন। নাথানের এক ভাই রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। আরেক ভাই অর্থ পাচারের মামলায় রাঙামাটি কারাগারে। ১৯৯৬ সালে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। ওই বছরই ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ বান্দরবান সফরে গিয়ে খিয়াং, লুসাই, ম্রো, বম জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেন। তাই পরীক্ষায় পাস না করলেও নাথান চারুকলা অনুষদে ভর্তির সুযোগ পান। 

বান্দরবানে ডাকাতির পর সরকারের উচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, নাথানকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হবে। এ ব্যাপারে বুধবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নোটিশ পাঠানো হয়নি।

কেএনএফ ২ এপ্রিল রাতে রুমার সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা করে। টাকা নিতে না পেরে ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণ ও পাহারায় থাকা পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুট করে। পরের দিন দুপুরে থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংক থেকে ১০ লক্ষাধিক টাকা লুট করে তারা। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার সদস্যরা সমন্বিত অভিযান চালান। অভিযানে এখন পর্যন্ত ৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়