রাঙামাটি । সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ , ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১২:৫২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র : চার মূলনীতিকে ভিত্তি ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ ইশতেহার

কী থাকছে ইশতেহারে

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র : চার মূলনীতিকে ভিত্তি ধরে স্মার্ট বাংলাদেশ ইশতেহার

টার্গেট- টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় গিয়ে ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন। আর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের মূল চার ভিত্তি : স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি গড়া। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এজন্য ইশতেহারে ঢাউস কোনো প্রতিশ্রুতি নয় বরং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে ক্ষমতাসীন দলটি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) ইশতেহার ছিল ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ নামে ইশতেহার দেয় একাদশ সাধারণ নির্বাচনে (২০১৮)। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০২৩-২৪) দলটির ইশতেহার হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে‘ রূপান্তরের রূপরেখাই থাকবে এবারের ইশতেহারে। বড় ধরনের কিছু মৌলিক পরিবর্তনও আসবে এই ইশতেহারে।

প্রথমবারের মতো ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রত্যয়টি জাতির সামনে আনেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে (১১ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যেতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে। এ সময় রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ১১টি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে এই ১১ পরিকল্পনা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে থাকবে বলে জানান তিনি।

স্মার্ট বাংলাদেশের ইশতেহারে যা থাকবে : দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন, বিগত ইশতেহার থেকে এবারের ইশতেহার একেবারেই ভিন্ন হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দেয়া হয়েছিল, যা আগের ইশতেহারগুলোর থেকে একেবারেই ভিন্ন ছিল। তাতে খাতভিত্তিক ডিজিটালাইজেশনের রূপরেখা ছিল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ইশতেহার দুটিতে মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি খাতভিত্তিক আরো কী কী করা হবে, সেসব প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়। এবার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হবে। গত একাদশ নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল মেগাপ্রকল্পগুলো। এবার বিশেষ গুরুত্ব হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ থাকবে।

কয়েকটি প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইশতেহার তৈরি করা হবে। ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা থাকবে। এছাড়া উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করার প্রতিশ্রæতি থাকবে।

বিগত নির্বাচনগুলোতে দেয়া ইশতেহার মূল্যায়ন করে এবারের নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক। মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক সমস্যার কারণে কঠিন সময় পার করছি। আগামীতে কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি। ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য সচিব সেলিম মাহমুদ বলেন, ইশতেহারে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, জীবনমান উন্নতি, সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রত্যয়ের মূল লক্ষ্য থাকবে। বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কল্যামুখী রাষ্ট্রে রূপান্তর করার রূপরেখা থাকবে।

এখন মাথায় স্মার্ট বাংলাদেশ : গত বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইশতেহারে বুলেট পয়েন্ট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ইশতেহার পড়ে কজন? সেটা খেয়াল রেখে করতে হবে। বুলেট পয়েন্ট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আনতে হবে। ঢাউস কিতাব বা বিশাল বই পড়ার সময় কারো নেই। সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। সামনে কঠিন সময়, জুঁই ফুলের গান গেয়ে লাভ নাই। ২০৪০ সাল মাথায় রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে, এখন মাথায় স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্টনেস কীভাবে আসবে? কীভাবে এর বিকাশ ঘটবে? এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তা করতে হবে। সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে।

সভায় নেতারা জানান, অতীতের ইশতেহারগুলো সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ নতুন ইশতেহারে কী কী এবং কীভাবে থাকবে সেই বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সে অনুযায়ী কমিটির সদস্যরা কাজ করবেন। পরবর্তী বৈঠকগুলোতে কাজের অগ্রগতি জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় খসড়া তুলে ধরা হবে। পুরো ইশতেহারের খসড়া তৈরি হলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে, তিনি চূড়ান্ত করবেন।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ও ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ, উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. সাত্তার মন্ডল, ড. বজলুল হক খন্দকার, ড. শামসুল আলম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও ডা. দীপু মনি, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, ড. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, অ্যাডভোকেট সায়েম খান প্রমুখ।

ভোরের কাগজ

জনপ্রিয়