রাঙামাটি । সোমবার, ২০ মে ২০২৪ , ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৮ মে ২০২৪

ভারত থেকে আসতে শুরু করেছে

পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ॥ দাম কমছে

পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ॥ দাম কমছে
ফাইল ছবি

পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে ভারত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম কমেছে প্রায় আট-দশ টাকা পর্যন্ত। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। ভারত থেকে পুরোদমে আমদানি শুরু হওয়ার পর দাম আরও কমার আশা করা হচ্ছে। তবে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভারতের রপ্তানি চালু হওয়ায় দেশে পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। দৈনিক জনকন্ঠ

এবার কোরবানির ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। দেশি পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন ও পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি হওয়ার খবরে পেঁয়াজ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ হবে বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।  ঢাকার শ্যামবাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ,  চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং দিনাজপুরের হিলি বন্দরের প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী এখন ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। পেঁয়াজ, চাল, ডাল, আদা, রসুন, চিনি, মসলাপাতিসহ যেকোনো ধরনের নিত্যপণ্য আমদানিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জরুরি এলসি খোলার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ কারণে ভারত থেকে সহজেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও একাধিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। ভারতসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক, বন্দর, কাস্টমসহ অন্যান্য জায়গায় দ্রুত সেবা প্রদানের বিষয়ে সরকার আন্তরিক।

এ বিষয়ে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর নিজ দায়িত্বে কাজ করছে। সুতরাং ভারত থেকে পেঁয়াজসহ যেকোনো নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, রমজানের ঈদ সামনে রেখে সরকারি দেনদরবারে ভারত সরকার ওই সময় বিশেষ বিবেচনায় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে বাংলাদেশে। সেই পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছিল।

এতে করে ঈদের আগে নতুন করে আর পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। আর এবার কোরবানির আগে ভারতের বাজার চালু হয়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির মতে, দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা রয়েছে। যেকোনো সময়  দেশে কোনো পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হলে সেই পণ্য নিয়ে কারসাজি শুরু করা হয়। অধিদপ্তরের অভিযানে এটা প্রমাণিত সত্য।

এবার কোরবানির আগে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা ছিল। তবে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেই সুযোগ ব্যবসায়ীরা নিতে পারবে না। এ ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তরও এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক বাজারে অভিযান পরিচালনা করবে। জানা গেছে, সারাবছরে ২৪-২৬ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এতে করে প্রতি মাসে দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও কোরবানির সময় সেই চাহিদা আরও দুই-তিন লাখ টন বাড়ে।

অর্থাৎ কোরবানির মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এ কারণে ভারত থেকে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতে এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো। তুলনামূলক দামও নাগালের মধ্যে রয়েছে। ফলে পেঁয়াজের প্রধান উৎস ভারত থেকেই পেঁয়াজ আনতে হবে। উল্লেখ্য, ৪ এপ্রিল পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার তথ্য জানিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, ডিজিএফটি পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য (মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস-এমইপি) নির্ধারণ করেছে ৫৫০ ডলার। সরকারের এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে। গত মার্চ মাসের শেষ দিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত।

এরপরই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। তবে নতুন পেঁয়াজ ওঠায় সেই দাম কমে যায়। গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজিখ্যাত এই পণ্যটি। তবে রপ্তানি চালু হওয়ায় ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজ চাষিরা স্বস্তি পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর পেঁয়াজের ভালো দাম পাবেন মহারাষ্ট্রের কৃষক। চলমান লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে কৃষকের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতেই ভারত সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে বলে জানা গেছে।