রাঙামাটি । রোববার, ১৯ মে ২০২৪ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৬ অক্টোবর ২০২১

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আজ ৬৫তম জন্মবার্ষিকী

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আজ ৬৫তম জন্মবার্ষিকী

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (ফাইল ছবি)


৩৫ বছর বয়সে ১৯৯১ সালের ২১ জুন মারা যান রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি প্রেম ও দ্রোহের কবি। ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ১৬ অক্টোবর বরিশাল রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন।

মা শিরিয়া বেগম, বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ। তাদের স্থায়ী নিবাস ছিলো বাগেরহাট জেলার মংলা থানার সাহেবের মেঠ গ্রামে। 

রুদ্রর নিজবাড়ি থেকে নানাবাড়ি মিঠেখালি খুব দূরত্বের ছিলো না। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি আর লেখালিখিতে আগ্রহ দুটোই তৈরি হয় তার এই নানাবাড়িতে। 

তার সেই ছোটোবেলায় নানাবাড়িতে ঢাকা থেকে প্রকাশিক ‘বেগম’ আর কলকাতার ‘শিশুভারতী’ পত্রিকা আসতো। এ বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের বইপত্রতো ছিলই। এসব কিছু তার দখলেই ছিলো। 

প্রাথমিকের ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। ১৯৬৬ সালে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে মংলা থানা সদরের সেইন্ট পলস স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তার আর ৯ম শ্রেণিতে পড়া হয়নি। যুদ্ধ শেষে ৯ম শ্রেণি টপকিয়ে কবি ১০ম শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে। 

এখান থেকেই ১৯৭৩ সালে ৪টি বিষয়ে লেটার মার্কসহ বিজ্ঞান শাখায় ১ম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপরে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। পিতামাতার ইচ্ছা ছিল, রুদ্র ডাক্তার হোক। কিন্তু রুদ্র বিজ্ঞানের পথে আর না গিয়ে তার পছন্দের মানবিক শাখায় চলে এলেন।

ঢাকা কলেজে এসে রুদ্র পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করলেন; সহপাঠী হিসেবে পেলেন কামাল চৌধুরী, আলী রিয়াজ, জাফর ওয়াজেদ, ইসহাক খানসহ একঝাঁক তরুণ সাহিত্যকর্মীকে। ১৯৭৫ সালে রুদ্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ২য় বিভাগে। দুবছরে তিনি ক্লাস করেছিলেন মাত্র ১৮টি। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হন বাংলা বিভাগে।

১৯৭৮ সালে রুদ্র ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মনোনয়নে সাহিত্য সম্পাদক পদে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কামাল চৌধুরী (ছাত্রলীগ) ও আলী রিয়াজ (জাসদ ছাত্রলীগ)। সেবার সাহিত্য সম্পাদক হন আলী রিয়াজ। রুদ্র সরাসরি কখনো রাজনীতিতে না এলেও ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রকাশ করেন তার রাজনৈতিক বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস টিকে ছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

রুদ্র ছিলেন ঢাবির সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। কিন্তু তিনি বেশি থাকতেন ফজলুল হক হলে বন্ধু কামাল চৌধুরীর ৩০৯ নাম্বার কক্ষে অথবা রেজা সেলিমের ১১০ নাম্বার কক্ষে। ১৯৭৯ সালে রুদ্রর অনার্স পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় বাংলা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ডক্টর আহমদ শরীফ তাকে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেননি। পরের বছর, ১৯৮০ সালে তিনি অনার্স পাস করেন। এরপর নানা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় আবারও পিছিয়ে পড়েন রুদ্র। ১৯৮৩ সালে নেন এমএ ডিগ্রি।

ছাত্রজীবনেই রুদ্রর দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়, ‘উপদ্রুত উপকূল’ আর ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’। প্রথম বইটির প্রকাশক ছিলেন আহমদ ছফা। দুটি বইয়ের জন্যেই রুদ্র যথাক্রমে ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে সংস্কৃতি সংসদ প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। রুদ্র ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-যুগ্ম সম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রকাশনা সচিব।

আলোকিত রাঙামাটি