রাঙামাটি । বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজ ডেস্কঃ-

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

প্রতিবন্ধী হয়েও দমে যাননি, কাঠের শিল্পকর্মে ছড়াচ্ছেন মুগ্ধতা

প্রতিবন্ধী হয়েও দমে যাননি, কাঠের শিল্পকর্মে ছড়াচ্ছেন মুগ্ধতা

সুপ্রিয় চাকমার তৈরিকৃত নানা শিল্পকর্ম

কাঠ দিয়ে নানা জিনিস বানিয়ে এলাকার মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছেন সুপ্রিয় চাকমা। দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না তিনি। এরমধ্যে চোখে কম দেখার কারণে সমাজসেবা অধিদফতরে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে তালিকভুক্ত হয়েছেন সুপ্রিয় চাকমা। 

কৃষির উপর নির্ভরশীল সুপ্রিয় চাকমার পরিবার। শারীরিক অক্ষমতা ও চোখের দৃষ্টি কমে আসায় কৃষি কাজও করতে পারে না সুপ্রিয়। কাজ না করতে পারায় কয়েক বছর ধরে পাহাড় থেকে বিভিন্ন জাতের সংগৃহীত কাঠ দিয়ে তৈরি নানা শিল্পকর্মে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন সুপ্রিয় চাকমা। 

খাগড়াছড়ি শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের জনপদ মহালছড়ি উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের মধ্য আদামের খামারবাড়ি এলাকায় সুপ্রিয় চাকমার বাড়ি। মহালছড়ি উপজেলা থেকে মুবাছড়ি ইউনিয়ন হয়ে সুপ্রিয় চাকমার বাড়িতে বেশ কয়েকটি পাহাড় পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় খুঁজে পাই সুপ্রিয় চাকমার বাড়ি। বাড়িতে ডুকতেই সাংবাদিক পরিচয় জেনেই স্বাগত জানান সুপ্রিয় চাকমার স্ত্রী জ্ঞানবালা চাকমা। কিছু বুঝে উঠার আগেই অপ্যায়ন শুরু করেন তিনি। 

এই কারুশিল্পীর ঘরজুড়ে তার কাঠের শিল্পকর্ম। কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন বরণ্য ব্যক্তি, বন্যপ্রাণী, বৌদ্ধমূর্তির অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গামারি, কাঁঠালসহ বিভিন্ন কাঠের আকৃতি পরিবর্তন করে তিনি এসব কারুকাজ করেছেন। সুপ্রিয় চাকমার এসব কাজ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন দর্শনাথীরা। 

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই আগ্রহ এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে দারুণ এই দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। কাঠ খোদাই করে একটি শিল্পকর্ম করতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ দিন। একেবারে সনাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কাঠের উপর কারুকাজ করা বেশ পরিশ্রমের। 

অসচ্ছল প্রতিবন্ধী কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা জানান, অনেক আগে এলাকার আত্মীয়-স্বজনের ছেলেদের বিভিন্ন ব্যবহারিক খাতা অঙ্কন করতাম। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামের রাউজানের একটি বিহারের অধ্যক্ষ আমাকে বিহারের জন্য কাঠ খোদাই করে হাঁস বানানোর জন্য অনুরোধ করেন। সংশয় নিয়ে শুরু করলেও সেই চেষ্টায় সফল হয়েছি। এরপর থেকে চেষ্টা চালিয়ে কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অবয়ব তৈরি করেছি। পরবর্তীতে কাঠ দিয়ে বিভিন্ন বরণ্য ব্যক্তির অবয়ব তৈরি করেছি। কাঠ দিয়ে প্রস্তুত করেছি জুম্ম জাতির পথপ্রদর্শক এমএন লারমার কাঠের ভাস্কর্য। কাঠ খোদাই করে বাংলাদেশের মানচিত্রের উপর জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছি। কারুশিল্পী আরো বলেন, ‘আমার এসব শিল্পকর্ম অনেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।  

সুপ্রিয় চাকমার প্রতিবেশী আলোক বিকাশ চাকমা ও চাচাতো ভাই রতন বিকাশ চাকমা বলেন, অনেক আগে থেকেই কোনো কাজ করতে পারেন না। তিনি অসচ্ছল অবস্থায় আছেন। কয়েক বছর আগে থেকে কারুশিল্পের কাজ করেন। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তবে সে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে কাঠের উপর কারুকাজ করেন। এসব শিল্পকর্ম অনেকে আগ্রহ নিয়ে এখানে শিখতে আসেন। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় শক্ত কাঠ খোদাই করতে অনেক সময় লাগে।

সুপ্রিয় চাকমা


পরিবারের সব কাজের পাশাপাশি স্বামীর এসব কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে সুপ্রিয় চাকমার স্ত্রী জ্ঞানবালা চাকমা। তিনি জানান, পরিবারের উপার্জনের জন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম, চোখেও ভালো দেখতে পান না। সে কৃষিকাজও করতে পারেন না। কৃষিসহ সব কাজ আমি করি। তিনি সারাদিন বাড়িতে কাঠ দিয়ে নানা কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করেন। তবে এসব কাজ করার সরঞ্জাম নেই। অভাবের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। 

তিনি আরো জানান, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেব মাসে ৭৫০ টাকা ভাতা পান সুপ্রিয় চাকমা। তবে নিজের শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহায়তা চান এই কারুশিল্পী। ভাঙা ঘরে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। সরকারের কাছে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দাবি করেন এই দম্পতি। 

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রতিভাবান কারুশিল্পী সুপ্রিয় চাকমা সর্ম্পকে আগে তেমন কিছুই জানতাম না। বর্তমানে তিনি সরকারের অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা পাচ্ছেন। তার শিল্পকর্মকে এগিয়ে নিতে আমরা আর্থিক সহায়তা করবো। 

আলোকিত রাঙামাটি